দুই দিন পর ববিতার জ্ঞান ফেরে, দাঁড়াতে পারছে না খুব কষ্ট করে দরজার কাছে যায়।বাইরে কেউ থাকলে যদি সাহায্য করে, কিন্তু কোনো লাভ হয়না।
ববিতা যে বাসায় থাকে সেখানে বাস টার্মিনাল। খুব শব্দ সেখানে এতো শব্দ
ববিতার কথা কেউ শুনতে পাচ্ছে না। ববিতার শেষ ভরসা পাসের বাসার রুহির আম্মু। জানালার কাছে যেয়ে রুহি বলে ডাকবে সে শক্তি নেই একটা বোতল ছিল বারান্দায়। সেটা দিয়ে শব্দ করতে থাকে একসময় , রুহির বাবা বলে ওঠে " কি সমস্যা আপনার? বাচ্চাদের মত শব্দ করছেন। " "ভাই ভাই আমার একটু......." আর কোনো কথা বলতে পারে না আবার অজ্ঞান হয়ে যায়। রুহির আম্মু কে ডেকে বলে, তুমি মহিলা কে চেনো? রুহির আম্মু বলে "চিনি মহিলা টা খুব সমস্যায় আছে । " রুহির আম্মু ভাবি ভাবি বলে ডাকলো কোনো নড়াচড়া নেই।রুহি কে নিয়ে বাইরে যেয়ে দেখে দরজায় তালা দেওয়া।
রুহির আম্মু আব্বু দারোয়ানের কাছে যায়। দারোয়ান ঐ বাসায় সব কিছু দেখে, দারোয়ান বলে ঐ বাসায় কেউ নেই আপনারা চলে যান।রুহির আম্মু বলে আপনি আমার বাসায় চলেন, দেখবেন বারান্দায় একজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। মরে পঁচে গেলে পুলিশ আসবে তখন দেখবো! দারোয়ান রুহির আম্মু কথা শুনে তাদের বাসায় যায়। দেখে একটা মহিলা পড়ে আছে,তালা ভেঙে ববিতার মুখে পানি দেয়।একটু পর ববিতার জ্ঞান ফেরে সারা গায়ে,,, মারার চিহ্ন। সবাই বলে পুলিশ কে খবর দেন, তা-না হলে আমাদের সবাই
কে জেলে যেতে হবে। ববিতা বলে আপনারা আমার বাবাকে ফোন করেন। আর কিছু করতে হবে না, আমি ঠিক আছি। রুহির আম্মু ফোন দিয়ে সব বলে। ববিতার বাবা বলে তুমি আমার মেয়ে কে একটু দেখ আমি যতক্ষণ, ঢাকায় না পৌঁছায়,, ,,,,,
ববিতার কিছু খাবার খেতে দেয়, ববিতার শুধু দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে,কে
এসেছিল কে এভাবে মারলো, কিছু বলছে না ববিতার বাবা ঢাকা পৌঁছে কি করবে বুঝতে পারছে না, ববিতা বাবা বাসায় যাবো তারপর ডাক্তার দেখাবে
আমি এখানে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বাবা চলো।মেয়ে কে নিয়ে কাঁদতে,,,, কাঁদতে চলে আসে। এভাবে কেউ কারও মারে, ববিতার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। পাঁচদিন হাসপাতাল থাকে। সবাই বলে থানায় যেয়ে কেস করো।মেয়ে কে ডিভোর্স নিয়ে নিতে। তোমার মেয়ে তো মরে পঁচে গেলে ও কোনো খোঁজ পাওয়া যেতো না। সবার চাপে পড়ে থানায় যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল।এমন সময় একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে, "ববিতা, জান আমার তুমি কেমন আছো.....?"
হাসানের কন্ঠে কথা শুনে চুপ হয়ে গেছে, কথা বলো ববিতা আমি তোমার ছাড়া বাঁচবো না। তুমি যা বলবে আমি সব শুনবো রাগ করোনা। আমার মাফ করে দেও আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারিনি। ঐ মেয়ে টা আমার জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছে। আমি শুধু তোমার ভালোবাসি। ববিতা বলল, "তুমি কি করে ভাবলে,আমি তোমার মত মিথ্যাবাদীর সাথে সংসার করবো। তুমি তো আমার জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছো। আমি বাবার সাথে থানায় যাচ্ছি। তোমার নামে তোমার বৌ এর নামে কেস করতে।" হাসান বলে "আমার তুমি একটা সুযোগ দেও তোমার পায়ে পড়ি কেস করতে যাবে না। আমি এখন তোমার কাছে চলে আসছি। তুমি মারবে কাটবে যা খুশি করো আমার সাথে নিয়ে থানায় যাবে আমার কসম আমি আসছি...."
ববিতা বসে বসে ভাবছে এই মানুষ টা কে আমি ভালোবেসেছি।
কি অদ্ভুত! আমার নিজের কাছে নিজের খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি রুপার সাথে যে অন্যায় করেছি। সৃষ্টি কর্তা হয় তো এভাবে বুঝিয়ে দিলেন।
সেদিন রুপার চোখের পানি দেখে আমার মন গলেনি। আজ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে বার বার রুপার কথা মনে হচ্ছে। মা মরা মেয়ে টা কে যে কষ্ট দিয়েছি।আজ আমি তার থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছি।হাসান এলো বাসার সবাই হাসান কে খুব বকাবকি করছে, ভালো লাগছে না। হাসান আমার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে," ববিতা তুমি বললে আমি সারাজীবন এখানে থাকবো।
আমি কখনো ঢাকা যাবো না....।"
ববিতা বাবা-মা পাশাপাশি বাড়ির সবাই কে বুঝালো। আমার জীবন টা এমন হওয়ার কারন আমি। তোমরা কেউ দায়ী না,চোখের পানিতে ভেসে যাচ্ছে। যে আমার জন্য একসময় জীবন দিতে পারতো, আজ নিজের হাতে সে আমার জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছে! হাসান বড় বৌ কে বাঁচানোর জন্য এসেছে। কারণ ববিতাকে তো আবেগ বিয়ে করেছে। তার বৌ কে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে বাচ্চাদের কি হবে সেই কথা ভেবে, ববিতার কাছে এসেছে। ববিতা সব বুঝতে পেরেছে কিন্তু হাসান কে খুব ভালোবাসে সেজন্য ক্ষমা করে দিল।
ববিতা এখন স্বাভাবিক জীবন শুরু করলো।আবার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি নিল একটা মেয়ে হয়েছে তিন বছর বয়স। ববিতা মায়ের বাড়ি থাকে। হাসান মাঝে মাঝে আসে মেয়ে কে দেখতে। ববিতা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ভালোবাসা অন্ধ। সবার জন্য ভালোবাসা সংসার না,,,,,জীবন টা এমন হওয়ার কথা ছিল না কিন্তু বিধাতা যা লেখে রেখেছেন তা মেনে নিতে হবে,,,,,