০১ পর্ব

জীবনটা স্বর্গ সুখ অনুভব করছি এত সুখ এত আনন্দ হয়ত আর কিছু নেই, কারণ সুখ কি জিনিস আনন্দ কি জিনিস আমি জানতামই না। কারণ একজন আমাকে খুব দামি মানুষ ভাবে সে আমাকে খুব ভালোবাসে, আমি ছায়া ক্লাস নাইনে পড়ি আমার খুব কাছের বান্ধবী রুপা আমরা দুজন সব সময় একসাথে যাই একসাথে আসি। সুখ-দুঃখ বলতে আমার রুপা কেই বুঝি ওই আমার সুখ ওই আমার দুঃখ,,, নিজের বাবার সাথেও ঠিকমতো কথা বলতে পারি না সৎ মায়ের জন্য, আমি অনেক ছোট থাকতে মা মারা যায়। বাবা আমার জন্য বিয়ে করে আমার মা লাগবে তাই। আমার দাদী আমার দেখতেই পারে না । কারণ দাদি ভাবে আমার জন্য আমার মা মারা গেছে,, সবাই তাই বলে,,,,

আমি খুব ছোট ছিলাম পিঠা খেতে চেয়েছিলাম মা রান্নাঘরে যাবে যাওয়ার সময় নাকি বিদ্যুৎ চমকায় জোরে বজ্রপাত হয় সেই শব্দে মায়ের কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে মারা যায়। আমাকে অনেকেই দেখতে পারে না ।আমার সুখের সাথী শুধু রুপা যাকে আমি সব কথা বলতে পারি কাঁদতে পারি। বাড়িতে অনেক কাজ করি সৎ মায়ের একটু ভালোবাসা ভালো ব্যবহার পাবো এই আশায়। আমি যতটুকু সময় স্কুলে থাকি ওই সময়টুকু স্বাধীন মনে হয় আমার মনে হয় আমি বেঁচে আছি। সৎ মায়ের এমন আচরণ আমার কোন বান্ধবী আমার বাড়ি আসে না। ওদের সামনে খুব খারাপ ব্যবহার করে এই জন্য আমিও লজ্জায় আমার কোন বান্ধবীকে নিয়ে আসি না।

স্বর্গ সুখ অনুভব করার কারণ হচ্ছে সাজ্জাদ, সাজ্জাদ নামের একটা ছেলে ও সব সময় আমার খোঁজ খবর নেয় ।প্রতিদিন স্কুল থেকে আসার সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে আমাকে কিছু না কিছু দেয় এটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। সাজ্জাদ একটা গাড়ির গ্যারেজে কাজ করে মেকানিক সবরকম গাড়ি মেরামত করতে পারে, ও আমাকে খুব দামি মানুষ ভাবে । আমি রুপার সাথে সব শেয়ার করি রুপা আমাকে বলে দেখ তোর সৎ মা তুই এসব করিস না। আমার  মা কখনোই চাইনা আমি স্কুলে যাই। আমার পিছনে দুই টাকা খরচ হবে এটাও চায়না। আমি আমার বাবার সাথে বসে কখনো খেতে পারি না।  মা ভাবে আমি হয়তো টাকা বা অন্য কিছু চায়। আমার মায়ের একটা ছেলে একটা মেয়ে তারাও আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে । 

স্কুল থেকে আসার সময় রুপা ওর বাড়ি চলে যায় তখন সাজ্জাদ আর আমি দেখা করি সেই দিন  । মায়ের শরীর খারাপ ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় আমার দেখে সাজ্জাদের সাথে কথা বলছে হাসছি,আমার চোখ মায়ের দিকে তাকিয়ে  আমার মনে হল এখনই আমার জান টা বেরিয়ে গেল। ভয়ে আমার সারা শরীর কাঁপছে না জানি আজ কি মার আছে আমার কপালে,,, সাজ্জাদ আমাকে বলল যদি কোন সমস্যা হয় তুমি আমাকে ফোন করবে আমি চলে আসবো তোমাকে নিতে। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি কোন অন্যায় তো করিনি, ছায়া - আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে তোমার সাথে দেখা হবে,,,,

আমি বাড়ি যাওয়ার সাথে সাথে মা বাবাকে বলে তোমার এই মেয়েকে ৭ দিনের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দেবে ।আমি আজ যা দেখেছি তোমার বলতে পারব না বলে কাঁদার অভিনয় করা শুরু করে দিল। আমি বাবাকে খুব বোঝানোর চেষ্টা করলাম বাবা আমার কোন কথাই শুনবে না। বাবা বলে দিল কাল থেকে তোমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ ঘরের বাইরে গেলে পা ভেঙে ঘরে রেখে দেবো। মা-বাবার সামনে অনেক ভালো সাজার অভিনয় করতো ,আমার খুব ভালোবাসে সে টা বোঝাতো বাবাকে সব সময়।কিন্তু বাবা না থাকলে মা আমার সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করত।মা তার এক আত্মীয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাইতো,,, বাবা কখনো মায়ের উপর কথা বলতে পারে না,,,,

এবার আমার দাদী শুরু করলো, এই বসির তুই যদি মান সম্মান বাঁচাতে চাস এই মেয়েকে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দে তা না হলে বড় বিপদে পড়বে ।আমার পক্ষে কথা বলার মত পৃথিবীতে কেউ নেই আমি ঘরে যেতেই মা আমার ঘরে দরজা লাগিয়ে দিল। আমি ঘরবন্দি হয়ে গেলাম রূপা বিকেলে এসে আমার কথা জিজ্ঞেস করে ছায়া কোথায়? দাদি- ও বাড়ি নেই ওর ফুফু বাড়ি গেছে। রুপা- ছায়া তো আমার আসতে বলল । কি ব্যাপার এত তাড়াতাড়ি ফুফু বাড়ি চলে গেল কেন আর এরা আমার তাড়িয়ে দিচ্ছে কেন? রুপার একটু সন্দেহ হয় কি ব্যাপার আমার সাথে এভাবে কথা বলছে কেন এরা সবাই,,, রুপা ছায়ার ঘরের পিছনে যেয়ে আস্তে আস্তে শব্দ করে,,,

রুপা- ছায়া সাজ্জাদের তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারছেনা এজন্য আমার কাছে বললো খোঁজ নিতে,,, ছায়া- আজ রাতে আমার  মা তার পছন্দের ছেলের সাথে মনে হয় আমার বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি খুব ভয় পাচ্ছি তুই সাজ্জাদ কে বল। মা যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে ওই লোক মাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে চেয়েছে এজন্য মা রাজি হয়ে গেছে রাতে বিয়ে হয়ে যাবে,,,, রাতে সাজ্জাদ আসে ছায়ার সাথে দেখা করতে,,, ছায়ার মা দেখে ফেলে ছায়ার  মা ঐ রাতে সাজ্জাদ কে লোক ঠিক করে মেরে ওদের বাড়ির উঠানে মাটি চাপা দিয়ে রাখে,,,,

ছায়া নিজের চোখে সব দেখে, তার ভালোবাসার মানুষটাকে মেরে মাটি চাপা দিয়ে রাখছে,,,,,,